Sunday, August 9, 2015

মারমা

মারমা  বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আদিবাসী জনগোষ্ঠী। মারমা জনগণের অধিকাংশই বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়িতে বসবাস করে। প্রায়শই তাদের আলাদা জনগোষ্ঠী হিসেবে দেখা হয়। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মারমা জনসংখ্যা ১,৫৭,৩০১। ২০০১ সালের আদমশুমারিতে তাদের সংখ্যা আলাদাভাবে দেখানো হয়নি।
মারমারা মঙ্গোলয়েড বর্ণগোষ্ঠীর অন্তর্গত। মারমাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, মারমাদের ভাষা ‘ভোট বর্মী’ শাখার বর্মী দলভুক্ত একটি ভাষা। বর্ণমালার নাম ম্রাইমাজা। বাম থেকে ডান দিকে লেখার রীতি অনুসারী বর্ণমালা উপমহাদেশীয় প্রাচীন ব্রাহ্মী লিপি হতে উদ্ভুত। মারমারা বিভিন্ন উপগোত্রে বিভক্ত যেমন: খ্যংসাঃচ্গাঃ, কক্দাইংসাঃচ্গাঃ, ওয়ায়ইংসাচ্গাঃ, মারোঃসাচ্গাঃ, কক্ফ্যাসাঃচ্ড়া প্রভৃতি।

পূর্বে মারমা পুরষেরা ‘দেয়াহ্’ (ধুতি) নামে এক প্রকার তাঁতে তৈরি কাপড় পরতো। তারা এদেয়াহু সাথে বারিস্টা অাঁঙ্গি পরিধান করে। পুরুষের ‘খবং’(পাগড়ি) পরে। মেয়েরা ‘বেদাই আঙগি’ নামক এক ধরনের ব্লাউজ পরেন। মেয়রো যে কাপড় দিয়ে বুক ডাকে তাকে ‘রাংকাই’ বলে। মেয়েরা নিম্নাগ্নে বিশেষ ‘থ্বিং’ বা ‘থামি’ পরিধান করে। স্বামী হলো পরিবার প্রধান, তবে পরিবারে স্ত্রীর ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মারমা সমাজে আত্মীয়তার বন্ধন খুবই শক্তিশালী, এ জাতীয় সম্পর্ক বৈবাহিক এবং রক্ত সম্পর্কীয় উভয় ধরনের হয়। সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রাচীন বার্মার থামোহাডা নামে পরিচিত উত্তরাধিকার নীতি অনুসরণ করা হয়। পুত্র ও কন্যা উভয়েই পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে।
মারমা জনগণের বাড়িঘর বাঁশ, পাহাড়ি ছন ও ঘাসের তৈরি। এসব বাড়িঘর মূলত বাঁশ দিয়ে উঁচু মাচাং-এর উপর তৈরি করা হয়। বাড়ির প্রত্যেকটি কক্ষই একাধারে শয়নকক্ষ ও গুদামঘর। মাচাং-এর নিচের জায়গাটি গবাদিপশু রাখা, জ্বালানি কাঠ সংরক্ষণ অথবা তাঁত স্থাপনের মতো নানাবিধ কাজে ব্যবহূত হয়। কিছু কিছু বাড়ি মাটির তৈরি এবং মাচাং-বিহীন। ভাত এবং সিদ্ধ করা শাকসবজি মারমাদের প্রধান খাদ্য।
মারমারা মূলত বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। ধর্মীয় উৎসব হিসেবে তারা ক্ছংলাপ্রে বা বুদ্ধ পূর্ণিমা, ওয়াছো বা আষাঢ়ী পূর্ণিমা এবং ওয়াগোয়াই বা প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে। প্রবারণা উৎসবের রাতে আকাশে রঙ্গিন ফানুস উড়ানো হয়। রথ যাত্রা হয়। মার্মাদের সবচেয়ে বড় উৎসব সাংগ্রাই। এদিন বয়স্করা শীল পালন করে। তরুণ-তরুণীরা মৈত্রী পানি ছিটিয়ে একে অপরের মঙ্গল কামনা করে। পাড়ায় পাড়ায় উৎসবের আমেজে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে। বুদ্ধ পূজা করা হয়। করা হয় বয়স্ক পূজাও। বয়স্ক পূজার মধ্য দিয়ে সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিদের সন্মান জানানো হয়।
মারমা জনগণের প্রধান পেশা কৃষি।  জুমচাষ তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রাথমিক কৃষিজ প্রয়াস। অবশ্য এর পাশাপাশি তারা পাহাড়ি অরণ্য থেকে গাছের পাতা, মূল এবং কন্দ সংগ্রহের মাধ্যমে খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। মারমা জনগণের মধ্যে বসতবাড়ি-সংলগ্ন ভিটায় ক্ষুদ্র আকৃতির বাগানচাষও দেখা যায়। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে ঝুড়ি তৈরি, চোলাই মদ তৈরি এবং মজুরি শ্রম। বস্ত্রতৈরি মারমা মেয়েদের মধ্যে একটি খুবই সাধারণ কর্মকান্ড।

মারমা বংশ এবং রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয় এ দুটি সংজ্ঞার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। ভাই ও বোনকে একই রক্ত সম্পর্কীয় বা পিতৃপরিচয় ধরে গণনা করলেও তাদেরকে আবার বংশগত দিক থেকে পৃথক হিসাবে দেখা হয়। যেমন বংশের ক্ষেত্রে মেয়ে মায়ের বংশ এবং ছেলে সব সময় বাবার বংশ পরিচয় লাভ করে। বিবাহ বিচ্ছেদে নারী এবং পুরুষ উভয়ের সমান অধিকার রয়েছে, তথাপি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটে কারবারি (গ্রামপ্রধান) অথবা হেডম্যান (মৌজা বা এলাকাপ্রধান)-এর আদালতে।
জাতপোয়ে নামক পালা ও ইয়েনপোয়ে নামক নৃত্য হচ্ছে জনপ্রিয় বিনোদন। মারমা সমাজে জ্ঞানী-গুণীজন এবং গীতিকারেরা ‘বিদ্ গাইট’ (ধর্মীয় শাস্ত্র), ‘বিদাং’ (জ্যোতিষশাস্ত্র) প্রভৃতি হতে মারমাদের কাহিনী সংগ্রহ এবং তাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণার আলোকে সমাজের বাস্তব রূপ ও  কাহিনী তুলে ধরার মধ্য দিয়ে সংগীত ও গীতিনাট্য রচনা করেন। মারমা সংগীতের প্রধান প্রধান ধারাগুলি হলো: কাপ্যা, চাগায়াঙ, সাখ্রাঙ, রদু:, লাঙ্গা, সাইঙগ্যাই, লুঙটি প্রভৃতি। যন্ত্রসমূহের মধ্যে সেইং ওয়েইং (বৃত্তাকার বড় আকৃতির কাঠের ঢোল), কিয়ে ওয়েইং (ছোট আকৃতির কাঠের ঢোল), পিলিঈ (বাঁশি) এবং ঝিনে গুরুত্বপূর্ণ। এ সকল যন্ত্রের সাথে বার্মায় ব্যবহূত বাদ্যযন্ত্রের মিল রয়েছে।
মারমা সম্প্রদায়ের মধ্যে তিন স্তরবিশিষ্ট প্রথাগত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। গ্রাম পর্যায়ের প্রশাসনিক প্রধান হলেন একজন কারবারি। মৌজা পর্যায়ের প্রধান হলেন একজন হেডম্যান এবং সার্কেল প্রধান হলেন রাজা। গ্রামের কারবারি মৌজার হেডম্যান এবং সার্কেল প্রধানের মূল দায়-দায়িত্ব হলো জুম ট্যাক্স সংগ্রহ করা। এর পাশাপাশি তাদের ওপর নিজ নিজ প্রশাসনিক স্তরে বিরোধ নিষ্পত্তি, রায় প্রদান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিবিধ সামাজিক-সাংস্কৃতিক দায়-দায়িত্ব অর্পিত।  [সাদাত উল্লাহ খান]

মারমাদের প্রধান প্রধান উৎসব

মারমাদের প্রধান প্রধান ধর্মীয় ও সামিাজিক উৎসব হচ্ছেঃ- বৌদ্ধ পূণিমা, কঠিন চিবর দান, ওয়াহ্গ্যই এবং সাংগ্রাই। মারমাদের বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান-কে সাংগ্রাই বলে।

বৌদ্ধ পূর্ণিমা

এই পূর্ণিমা তিথীতে মহামতি গৌতম বৌদ্ধ জন্মগ্রহণ, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এটি একটি ধর্মীয় উৎসব।

কঠিন চীবর দান

তুলা থেকে সুতা তৈরী করে তা রং করে এক রাতেই বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের পরিধানের চীবর তৈরী করা হয় বলে একে কঠিন চীবর বলে।

ওয়াহ্গ্যই

এটিও একটি ধর্মীয় উৎসব। এই দিনে মারমাদের মারমারা গৌতম বৌদ্ধদের মহা চুলকে পূজা ও উৎসর্গ করার জন্য ফানুষবাতি উড়ানো হয়।

সাংগ্রাই

সাংগ্রাই একটি বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এসময় মারমাদের ঘরে ঘরে পিঠা উৎসবের ধূম পড়ে।
কিছু ছবিঃ










Monday, August 3, 2015

কেমন আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা??

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের
একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ।
যেখানে স্মরণাতীত কাল থেকে বসবাস
করে আসছে ১০ ভাষা ভাষী ১১ স্বতন্ত্র
আদিবাসী সম্প্রদায়। এখানকার
আদিবাসীরা ধারাবাহিকভাবে তাদের
কৃষ্টি সংস্কৃতিকে লালন পালন
করে আসছে। আদিবাসীদের নিজস্ব
সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যময় জীবন
ধারা বাংলাদেশের
সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্রময়।
বলা বাহুল্য যে, দেশের আদিবাসীদের
সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও
জীবনধারা আন্তর্জাতিক
পর্যায়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক
অঙ্গণকে উচ্চ
পর্যায়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।
কিন্তু দঃখজনক হলেও সত্য যে, যুগ যুগ
ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত
আদিবাসীরা শোষন ও বঞ্চনার শিকার
হয়ে আসছে। পার্বত্য
চট্টগ্রামে অস্থায়ী সেটেলার
বাঙালি কর্তৃক অবৈধভাবে ভূমি দখল ও
অনৈতিক কার্যকলাপ সেখানে বসবাসরত
আদিবাসীদের
জীবনধারাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্হ
করেছে। কিন্তু এসব অবৈধ ও অনৈতিক
কার্যকলাপ বাংলাদেশের মোট
জনসঃখ্যার একটি বিশাল অংশের
কাছে অজানা এবং অনেক জানার সত্বেও
উগ্র সাম্প্রদায়িক মন মানসিকতার
কারনে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এ
প্রসঙ্গে প্রশ্ন হচ্ছে:
১)এ বিষয়গুলো কি সরকারে অজানা?
২)নাকি জানার সত্বেও তা সমাধানের
সদিচ্ছার অভাব?
৩/নাকি পার্বত্য চট্টগ্রামের
আদিবাসীদের সংখ্যালঘু থেকে লঘুতর
করার প্রক্রিয়া?
৪/ নাকি পার্বত্য চট্টগ্রামের
আদিবাসীদের দমিয়ে রাখার
বহিপ্রকাশ??
পার্বত্য চট্টগ্রামের অতীত ও বর্তমান
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
বিশ্লেষণ করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে,
বাংলাদেশ সরকার তথা শাষকগোষ্ঠির
পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ দিনের বিভিন্ন
মুখী সমস্যা সমাধানের যথেষ্ট
আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।
যার ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের
আদিবাসীরা একদিকে যেমন সরকারের
অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার
হচ্ছে অন্যদিকে ভ্রাতৃঘাতীর মত চরম
পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।
সন্ত্রাস দমন ও সামাজিক
নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার নামে পার্বত্য
চট্টগ্রামে দীর্ঘ দিন
ধরে চলে আসছে অঘোষিত সেনা শাসন।
সেনাসাশন কী একটা দেশ কিংবা দেশের
একটি বিশেষ অঞ্চলের অর্থনীতি,
সামাজিক রাজানৈতিক তথা গণতান্ত্রিক
পন্থার জন্য কল্যাণকর? বিগত
সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব
সাম্প্রদায়িক
হামলা হয়েছে সেখানে সেনাবাহিনীর
প্রত্যক্ষ ভূমিকা দেখা গেছে।১৯৮৯
সালে লঃগদু গণহত্যা ও ১৯৯২
সালে লোগাং গণহত্যায়
সেনাবাহিনী আদিবাসীদের
বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছিল।বিগত
২০১২ সালে ২২ ও ২৩ অক্টোবর
রাঙামাটি শহরে ও গত ২৫ ও ২৬
ফেব্রুয়ারী কমলছড়িতে সংঘটিত
সাম্প্রদায়িক হামলায় আদিবাসীদের
বিরুদ্ধে বাঙালী সেটেলারদের
উসকানি ও প্রত্যক্ষ
সহায়তা করতে সেনাবাহিনী ভূমিকা রেখেছে।
এসব গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলায়
আদিবাসীদের অসংখ্যা ঘর-বাড়ি,
দোকান-পাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়
এবং নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এসব
জঘন্য হামলার স্বীকার হতে নিস্পাপ
শিশুরাও বাঁচতে পারে নি। পার্বত্য
চট্টগ্রামের আদিবাসীদের দমিয়ে রাখার
জন্য শহর এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত
এলাকা পর্যন্ত অস্থায়ী ও অবৈধ
সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যার
ফলে সেখানে বসবাসরত আদিবাসীরা চরম
অনিশ্চয়তা ও ঝুকির মধ্য দিন কাটাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
সমস্যা হচ্ছে ভূমি বিরোধ। বিগত কয়েক
দশক আগেও পার্বত্য
চট্টগ্রামে পাহাড়ি পাহাড়ি আদিবাসীদের
জনসংখ্যা ৮০-৮৫ শতাংশ ছিল। কিন্তু
কিন্তু বর্তমানে তা ৫০ শতাংশের কম।
প্রশ্ন হচ্ছে, মাত্র কয়েক
দশকে পাহাড়িদের জনসংখ্যার হার
আশ্চর্যজনক ভাবে কমে গেল কি ভাবে?
এটা সত্য যে, গুটি কয়েক বাঙ্গালি সমতল
অঞ্চল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামমে বৈধ
ভাবে জমি কিনে স্থায়ী ভাবে বসবাস
করছে।। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক
জায়গা এখন অস্থায়ী সেটেলার
বাঙ্গালীদের অবৈধ দখলে।
সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায়
তারা ক্রমান্বয়ে পাহাড়িদের
জায়গা জমি দখল করছে। আবার
পাহহাড়িরা যখন সংঘবদ্ধ হয়ে তা প্রতিহত
করার চেষ্টা করে তখন তাদের
বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়
এবং প্রয়োজনে তাদেরকে হত্যযা ও গুম
পর্যন্ত করা হয়।
গত ২৩ এপ্রিল
২০১৩ইং তারিখে বাংলাদেশ সরকারের
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ
হাসিনা রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্দোগ
নেয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও
মেডিকেল কলেজ স্থাপন পার্বত্য
অঞ্চলের শিক্ষার মান উন্নয়ের জন্য
নাকি পাহাড়িদের উচ্ছেদ করার আর
একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র?
অবৈধ দখলকারী বহিরাগত সেটেলার
বাঙালী ছাড়া মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়
কেউ চায় না!!
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার ব্যবস্থা খুবই
করুন।
আমরাও শিক্ষার আলোয় আলোকিত
হতে চাই।
ঘরে ঘরে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার
হওয়া চাই।
মানুষের মৌলিক চাহিদা কি???
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা।
অন্ন না থাকলে বাঁচবেন কি করে??
বস্ত্র না থাকলে চলাফেরা করবেন
কি করে??
বাসস্থান না থাকলে থাকবেন কোথায়???
শিক্ষা না থাকলে নিজেকে পরিচালনা করবেন
কিভাবে???
চিকিৎসা না থাকলে বাঁচবেন কি করে???
পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যা কি??
পার্বত্য বাসীরা চাই কি???
উত্তর: পার্বত্য অঞ্চলের মূল সমস্যা-
ভূমি সমস্যা।
পার্বত্য বাসীরা চাই
ভূমি সমস্যা সমাধান হোক।
কেন প্রধান সমস্যা হবে না?? আজ তোমার
বাড়ির পাশে মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়
হল। অথচ তোমার বসব ভিটা,
ভূমি ভূমিদস্যুদের হাতে দখল হচ্ছে,
তোমাকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তখন
তুমি শিক্ষা চাও নাকি বসত
ভিটা চাও????
মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয় বসবে শত শত
একরের ভূমি জুড়ে। কিন্তু
বসবে কোথায়???? পাহাড়িদের উচ্ছেদ
হওয়া ছাড়া আর কি আছে???
আপনারা কি লক্ষ করেছেন রাস্তাঘাট,
শিক্ষা প্রতিস্থান, সেনা,
বিজিবি স্থাপনে উন্নয়নের নাম করে কত
হাজার হাজার আদিবাসী উচ্ছেদ
হয়েছে??? উন্নয়নের নাম
করে পাহাড়ি আদিবাসীদের উচ্ছেদ
করে সেটেলারদের অবৈধ
বসতি গড়া হচ্ছে। আজ তোমার বাড়ির
আঙ্গিনায় মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়
হয়ছে, কাল তোমায় দেশ
ছেড়ে পালাতে হবে বা অন্যত্রে আশ্রয়
নিতে হল, তখন ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার
কোন কাজে আসবে??? বাংলাদেশের
শাষকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টটগ্রামের
আদিবাসীদের সংখ্যালঘু থেকে লঘুতর
করার জন্য মাতাল। বিভিন্ন
সময়ে বিভিন্ন মন ভোলানোর
প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাহাড়িদদের
জায়গা জমি দখল করা হচ্ছে। সেই ৬০
দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন উন্নয়নের নাম
করে আমেরিকান অর্থায়নে কাপ্তাই বাঁধ
নির্মাণের ফলে ৫৪ হাজার একর কৃষিজমি,
যা ওই এলাকার মোট কৃষিজমির ৪০
শতাংশ এবং সরকারি সংরক্ষিত বনের ২৯
বর্গমাইল এলাকা ও অশ্রেণীভুক্ত ২৩৪
বর্গমাইল বনাঞ্চল জলের
নিচে তলিয়ে যায়। আনুমানিক ১৮ হাজার
পরিবারের মোট এক লক্ষ মানুষ গৃহহীন
হয়ে পড়ে।
সেই থেকে পার্বত্য
অঞ্চলে গৃহহীনমানুষের মিছিল দীর্ঘ
হতে থাকে, বাড়তে থাকে ক্ষোভ আর গাঢ়
হতে থাকে অধিকার আদায়ের আন্দোলন।
দশ হাজার একরের একটি সংরক্ষিত
বনাঞ্চলকে এসব ছিন্নমূল মানুষের
পুনর্বাসনের জন্য বন্দোবস্ত দেয়া হলেও
তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই
কাপ্তাই বাঁধ থেকে সৃষ্ট কৃত্রিম হ্রদ
বাঙালিদের নয়ন ভরালেও পাহাড়িদের
দুঃখ ঘোচেনি।
উচ্ছেদের কথায় বাদ দিলাম, সরকার আজ
যেখানে মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপনের কথা বলে মুখে ফেনা তুলেছেন
আপনারা কি ঐ অঞ্চলের
শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন
তলিয়ে দেখেছেন??? কখনো দেখেছেন
প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিস্থানের
শিক্ষার মানের অবস্থা কেমন???
কখনো খোজ নিয়েছেন
কিভাবে প্রাইমারী, হাই স্কুল ত্যাগ
করে কলেজে যায়???
প্রতি জেলাতে কয়টি সরকারী কলেজ
রয়েছে??? প্রথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক
প্রতিস্থানের পাঠদান দেখেছেন কেমন
অবস্থা??? একটি প্রাইমারী কিংবা হাই
স্কুলে যেতে কত মাইল যেতে হয়
জানেন???? ৭ হতে ১০ মাইলের পথ
হেটে আপনি কখনো স্কুলে যাবেন??? শুধু
শিক্ষার অনুসন্ধানে আমাদের ৭/৮ মাইল
হাটতে হচ্ছে। ঠিক আছে,
আপনি এসএসসি পাশ করেছেন। এখন
কোথায় ভর্তি হবে?? তোমার
আশেপাশে কোথাও কলেজ আছে???? নেই
নেই নেই। কলেজ পড়তে হলে তোমাকে দূর
পাল্লায় পাড়ি দিতে হবে। কোথায়
যাবেন?? তোমাকে অবশ্যই
রাঙামাটি শহরে আসতে হবে?? সকলের
কি স্বামর্থ আছে এত
দূরে পড়ালখা করা??? পার্বত্য
বাসীরা আপনারাই বলেন,
রাঙামাটি জেলায় ভালো কলেজ কোথায়
আছে??? বাড়ি থেকে ক্লাস করার
যাতায়াত ব্যবস্থা আছে???? যেসকল
প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সেখানে কি পর্যাপ্ত
পরিমানের শিক্ষক রয়েছে??? ক্লাস
কি নিয়মিত হচ্ছে???
এখন আপনিই বলুন, এখানে মেডিকেল,
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন
করা কততা জরুরি???
সুতরাং, উক্ত
প্রতিষ্ঠানগুলো না করে মাধ্যমিক, উচ্চ
মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান গুলো জোর
দেওয়া উচিত নয় কি???
পার্বত্য চট্টগ্রামের আরও
একটি উদ্দেগজনক
সমস্যা হচ্ছে আদিবাসী নারীদের
নিরাপত্তার অভাব। প্রতিনিয়ত
যেখানে ঘটছে নারী ও শিশু ধর্ষণের মত
অনৈতিক ও অমানবিক কার্যকলাপ।
পাহাড়ি নারীরা নিত্য নৈমিত্তিক
কার্যকলাপ নিরাপদে সম্পন্ন
করতে পারছে না এবং তাদেরকে অনেক
ঝুকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে শিক্ষাগ্রহন
করতে হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও
বাঙ্গালি সেটেলাররা তাদের স্কুল
কলেজে আসা যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত
করে এবং সুযোগ পেলে মান হানি পর্যন্ত
করে। ভাবতে অভাক লাগে যে,
বিশ্বায়নের এই যুগেও
আদিবাসী নারীরা নিরাপত্তার
অভাবে রয়েছে। সরকারের এ
ব্যাপারে সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহন অত্যন্ত
জরুরী কিন্তু দুক্ষের বিষয় হচ্ছে, এসব
বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছারকোন দৃষ্টান্তই
চোখে পড়ে না। উল্টো শাষকগোষ্ঠির
একটি মহল পার্বত্য অঞ্চলের
আদিবাসীদের দমিয়ে রাখার জন্য
সেনাবাহিনী ও সেটেলার
লেলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ
সরকার কি পার্বত্য চট্টগ্রামের
আদিবাসীদের ভিনান
মুখী সমস্যা চিহ্নিত
করে সেগুলো সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহন
করার মাধ্যমে আন্তরিকতা ও
দায়য়িত্বশীলতার পরিচয়
দিবে নাকি আদিবাসীদের
অবহেলা করে তার
ব্যক্তিত্বকে বিশ্ববাসীর সম্মম্মুখে হীন
অবস্থায় পরিনত করবে??