Wednesday, July 1, 2015

চাকমা



চাকমা / চাংমা রাঙামাটিবান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসকারী বাংলাদেশের একটি প্রধান উপজাতি। চাংমারা বার্মার আরাকান রাজ্যে ডাইংনেট নামে পরিচিত । চাংমারা মঙ্গোলীয় জাতির একটি শাখা এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। বৌদ্ধপূর্ণিমা ছাড়া তাদের অন্যতম প্রধান আনন্দ উৎসব হচ্ছে বিজু। তাদের প্রধান জীবিকা কৃষি কাজ। জুম চাষের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন খাদ্যশষ্য ও রবিশষ্য উৎপাদন করে থাকে।
চাকমাদের উৎপত্তিকাল, আদি নিবাস ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাদের আগমন ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে ষোড়শ শতকের আগের কোনো সুস্পষ্ট ইতিহাস পাওয়া যায়নি। তবে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য থেকে নিশ্চিত বলা যায়, সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধেও পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের বসবাসের নজির আছে। ১৭২৫ সালে চাকমাদের চট্টগ্রামে আগমনের ইতিহাস প্রমাণ্য হিসাবে আছে। অষ্টম শতাব্দীর শুরুতে আপার অসমের ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তীতে চাকমা রাজ্যের রাজধানী ছিল চম্পক নগর । সময়ের পরিক্রমায় চাকমা রাজতন্ত্রে নানা উত্থান-পতন ও বর্মা-মোগলদের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে চাকমাদের আবাসস্থল এবং রাজ্য শঙ্খ নদীর তীরবর্তী হাঙ্গরকুল ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া হয়ে উত্তর-পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে ব্যাপ্ত হয়।
চাকমাদের ভাষার নামও চাকমা। চাকমাদের নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। চাকমারা ৪৬টি গোজা ও বিভিন্ন গুথি বা গোষ্ঠীতে বিভক্ত। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের সংখ্যা ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৭ জন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তবে বর্তমানে তা তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। চাকমারা আদি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তবে তারা বৌদ্ধ হলেও কেউ কেউ আবার প্রকৃতি পূজারীও। চাকমারা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে। ক্রমাগত সৎকর্ম সাধনের মাধ্যমে নির্বাণ লাভ করা যায় বলে বিশ্বাস করে তারা।

উৎসব[সম্পাদনা]

চাকমাদের সবচেয়ে বড় জাতিগত উৎসব বিজু। বাংলা বছরের শেষ দুদিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এ উৎসব পালন করা হয়। বাংলা বছরের প্রথম দিনকে বলা হয় ফুল বিজু এবং শেষ দিনকে বলা হয় চৈত্র সংক্রান্তি বা মূল বিজু। ফুল বিজুর দিন সকাল বেলা চাকমারা ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করে ফুল দিয়ে সাজায়, বুড়ো-বুড়িদের গোসল করায়, নতুন কাপড় দেয়। রাতে বসে পরের দিনের পাচন তরকারি রান্নার জন্য সব্জি কাটতে বসে যা কমপক্ষে ৫টি এবং বেশি হলে ৩২ রকম সব্জির মিশেলে রান্না করা হয়। পরের দিন মূল বিজু, এদিন চাকমা তরুণ-তরুণীরা খুব ভোরে উঠে কলা পাতায় করে কিছু ফুল পানিতে ভাসিয়ে দেন। তারপর সবাই বিশেষ করে ছোটোরা নতুন জামা-কাপড় পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে থাকে। তবে গ্রাম গুলোতে প্রাচীনকালের মতোন করে ঘিলা খারা (খেলা) হয়। পরের দিন নতুন বছর বা গয্যে পয্যে, নতুন বছরের দিন সবাই মন্দিরে যায়, খাবার দান করে, ভালো কাজ করে, বৃদ্ধদের কাছ থেকে আশীষ নেয়।
চাকমা লোকসাহিত্য বেশ সমৃদ্ধশালী। তাদের লোক কাহিনীকে বলা হয় উবগীদ। চাকমাদের তাল্লিক শাস্ত্র বা চিকিৎসা শাস্ত্র অনেক সমৃদ্ধ। আর বয়ন শিল্পে চাকমা রমণীদের সুখ্যাতি জগৎ জুড়ে।
একসময় জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল এ জনগোষ্ঠী এখন নিজ প্রচেষ্টা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষা-দীক্ষায় বেশ এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে অগ্রসর আদিবাসী জনগোষ্ঠী হিসেবে তাই সহজেই বিশেষভাবে পরিচিত চাকমারা। পার্বত্য চট্টগ্রাম যে তিনটি সার্কলে বিভক্ত এর অন্যতম চাকমা সার্কল।

No comments:

Post a Comment