Wednesday, July 1, 2015

নিজস্ব ভাষা ও সংষ্কৃতি

পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংষ্কৃতি। ভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে সংখ্যাগতভাবে এ দেশে বাংলা ভাষার পরে চাকমা ভাষার অবস্থান(২০১১ সালে আদমশুমারী অনুযায়ী চাকমা জনগোষ্ঠী ৪ লাখ ৪৪ হাজার)। ভাষাগত দিক থেকে চাকমা ও তঞ্চঙ্গাদের ভাষা অনেকটা কাছাকাছি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১টি ভাষাভাষীর জাতির মধ্যে চাকমারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। চাকমাদের আবাসস্থল পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও ভারতের মিজোরাম, অরুনাচল,ত্রিপুরা, আসাম ও মায়ানমারে রয়েছে। সমগ্র পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় আট লক্ষ লোক চাকমা ভাষায় কথা বলে। মূলত চাকমা ভাষা ইন্দো -ইউরোপীয় বৃহৎ ভাষাগোষ্ঠীর অন্তভুর্ক্ত।পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিগোষ্ঠী গুলোর মধ্যে চাকমা ও মারমাদের ছাড়া আর কোনো গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষার বর্ণমালা নেই।
চাকমা ভাষার লেখনরীতি 'মন খমে'র অনুরুপ। চাকমাদের নিজস্ব বর্ণমালা আছে তবে এর সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ড. জি-এ গ্রিয়ারসন তার' লিঙ্গুয়েস্টিক সার্ভ অব ইন্ডিয়া ' গবেষণায়(১৯০৩) চাকমা ভাষায় ৩৩টি বর্ণমালার কথা উল্লেখ করেছেন। সতীশ চন্দ্র ঘোষ ' চাকমা জাতি(১৯০৯) গ্রন্থে ৩৭ টি বর্ণমালার কথা বলেছেন। অন্যদিকে নোয়ারাম চাকমা ১৯৫৯ সালে তার চাকমা বর্ণমালার পত্তম শিক্ষা নামক পাঠ্য বইয়ে ৩৯ টি বর্ণমালার কথা উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে চাকমা ভাষায় ৩৩টি বর্ণমালা ব্যবহৃত হচ্ছে।
চাকমারা একসময় তান্ত্রিক বৌদ্ধমতে বিশ্বাসী ছিলেন।
এ মতের অনুসারী লুরি বা পুরোহিতরা চাকমা বর্ণমালার সাহায্যে তাদের ধর্মগ্রন্থে আঘরতারা রচনা করেছিলেন। এ আঘরতারা গ্রন্থটি চাকমাদের সবচেয়ে প্রাচীন পুঁথি হিসেবে আজও বিবেচিত হয়ে থাকে। তাছাড়া তান্ত্রিক শাস্র বা চিকিৎসা শাস্রে চাকমা বৈদ্যরা চাকমা লিপি ব্যাবহার করতেন,যেটি বংশ পরম্পরায় ও তাদের শিষ্যদের মাধ্যমে এর ব্যবহার আজও অব্যাহত রয়েছে। আঠারো শতকের (১৭৭৭) দিকে চাকমা সাধক কবি শিবচরণ তার গোজেনলামা গীতি কবিটাটির চাকমা বর্ণমালায় রচনা করেছিলেন। তাই ধারনা করা হয় চাকমা সাহিত্য ও তান্ত্রিক শাস্রচর্চায় চাকমা বর্ণমালা ব্যাবহারের প্রচলন বহু আগে থেকে শুরু হয়েছে। ২০০১ সালে জ্যাক -এর সহায়তায় মোঃ মোস্তফা জব্বার চাকমা বর্ণমালার প্রথম সফটওয়্যার তৈরী করেন যা দিয়ে অনেক শিক্ষিত চাকমা নর-নারী উপকৃত হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment