Monday, July 27, 2015

চাকমা উপজাতিদের জীবন ধারা

বাংলাদেশে ৪৫ টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। শত শত বছর থেকে এদেশে এসব জনগোষ্ঠী বাঙালিদের পাশাপাশি বসবাস কওে আসছে । তাদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা আলদা সংস্কৃতিক ও ঐতিহ্য। এসব জনগোষ্ঠী উপজাতি নামে পরিচিত । পাহাড় সমতল ও বনভুমিতে তারা বাস করে। বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি উপজাতি জনগোষ্ঠীর বিস্তারিত দেওয়া হল-
১।চাকমা
২। মারমা
৩।সাঁওতাল
৪। গারো
৫।মণিপুরি
৬।মুরং
৭।খাসি
৮।হাজং
৯।ওঁরাও
১০।রাজবংশী
আমরা এখনে চাকমা উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবনধারা সর্ম্পকে জানব-
বাঙালির পরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হচ্ছে চাকমা । চাকমারা নিজেদের ‘চাঙমা‘ বলেন।  রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলায় চাকমারা বসবাস করেন্‌ বান্দরবান জেলায়ও এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন। 
চাকমাদের সামাজিক বৈশিষ্ট্য চাকমারা বৈৗদ্ধ ধর্মালম্বী। এরা অনেক গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এদের পরিবারে পিতৃপ্রধান। চাকমা জনগোষ্টীর প্রধান হচ্ছেন রাজা। যে কোনো ব্যাপারে তার মতামত চুড়ান্ত বলে মানা হয়। চাকমাদের কিছু ভালো গুনরয়েছে । তারা বিপদে এবং অভাবের সময় একে অপরকে সাহায্য করে।চাকমা সমাজে নানা বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণ। এখন আমরা সেগুলো সর্ম্পকে জানব।
গৃহ ও বাসস্থান 
চাকমারা গ্রামকে ‘আদাম‘ এবং গ্রামের প্রধানকে ‘কারবারি‘ বলে । ছোট ছোট নদীর তীরে কম উচু পাহাড়ের ওপর খোলামেলা জায়গায় গ্রামগুলো অবস্থিত । শক্ত গাছের ওপর কাঠ ও বাঁশ দিযে এরা মাচাঘর বানায় । মাচাঘরে ওঠার জন্য কাঠের সিঁড়ি থাকে । মাচাঘরের সামনে জলের পাত্র রাখার জন্য একটি খোলা ছোট মাচা থাকে। একে ‘ইজর‘ বলে । প্রায় সব গ্রামে মন্দির আছে। মন্দিরকে এরা ‘ক্যাং‘ বলে। এখন চাকমারা সমতল ভুমিতে ও বসবাস করে। তারা লেখাপড়া ব্যবসা- বাণিজ্য , চাকরি ইত্যাদি নানা পেশায় বেশ সুনাম অর্জন করেছে। 
খাদ্যভ্যাস
চাকমাদের প্রধান খাদ্য ভাত । তারা ভাতের সাথে মাছ মাংস ও শাকসবজি খেতে ভালোবাসে । শুটকি মাছ খেতে এরা খুব পছন্দ করে।
পোশাক
এরা নিজেদের তাঁতে কাপড় বোনে । এই কাপড় দিয়ে তারা পোশাক তৈরি করে। এই পোশাকে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যর ছাপ আছে। চাকমা নারীদেও ঐতিহ্যবাহি পোশ কের নাম পিনোন-খাদি। কিশোররা নানা রকম পোশাক পরে। এখন আধুনিক পোশাকেরও চাকমারা অভ্যাস্ত হয়ে উঠেছে। 
পেশা 
চাকমারা জুম পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে। পাহাড়ের ঢালু জায়গায় গাছপালা গর্ত কওে বীজ বপণ করে। একে ‘জুম‘ চাষ বলে। সমতল ভ'মিতে লাঙল দিয়ে চাষ করে। বিভিন্ন ফসল ফলায় । চাকমারা পোশাক তৈরি করে। দেশি ও বিদেশিদের কাছে তাদের উলের তৈরি ‘শাল‘ ও অন্যান্য কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। এরা বাঁশ ও বেত দিয়ে ঝুড়ি , পাখা, চিরুণি, বাঁশি ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত তৈরি করে। এদের তৈরি দেখতে খুবই সুন্দর। 
সামাজিক ও ধমীয় উৎসব 
চাকমাদের মধ্যে অনেক পূজার্পাবন প্রচলিত আছে। এরা গৌতম বুদ্ধেও জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মৃত্যু দিনের স্বরণে ‘বৈশাখী পূর্ণিমা‘ পালন করে। এছাড়া এরা ‘মাঘীপূণির্মা‘ পালন করার সময় ‘কঠিন চীবরদানোৎসব‘ পালন করে। এদের শ্রেষ্ঠ উৎসব ‘বিজু‘। বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের প্রথম দিন এরা উৎসব পালন করে। বিয়ে ও অন্যান্য উৎসবে এরা নাচগান করে। নানা রকম বাদ্য যন্ত বাজায়। 
আচার অনুষ্টান চাকমাদের অনেক আচার অনুষ্টান রয়েছে। জন্মের পর শিশুর মুখে মধু দেয়া হয়। সাত দিন পর ওঝা ডেকে শিশুর চুল ধুয়ে তাকে পবিত্র করা হয়। কেউ মারা গেলে মৃত্যুদেহকে সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়। মৃতদেহ স্নান করানো হয় এরা মৃতদেহকে আগুনে পোড়ায় । শিশুদের মৃত্যু দেহ কবর দেয়া হয়। চাকমাদের বিবাহ রীতি চমৎকার । বরযাত্রিরা কনের বাড়ি পৌঁছালে তাদের সাদরে গ্রহণ করা হয়। মেয়েকে বরের বাড়িতে এনে ‘চুঙুলাং‘ পুজা শেষে বিয়ের অনুষ্টান শেষ করা হয়। চাকমাদের নিজস্ব বর্ণ মালা আছে। নিজেদের মধ্যে তারা এই ভাষায় কথা বলে । তাদের নিজস্ব নাচ গান ও সাহিত্য আছে। রূপকথা , পুরাকাহিনী ও ছাড়া প্রচলিত আছে। নাদের খারা , কুস্তি এবং ঘিলা ( এক রকম বিচি দিয়ে গুটি খেলা ) এদের প্রিয় খেলা । মেয়েরা বউচি খেলতে ভালোবাসে । চাকমারা সুসাস্থের অধিকারি । চাকমামেয়েদের মধ্যে লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত হবার প্রবণতা বেড়েছে। এদের অনেকেই এখন উচ্চশিক্ষিত ও সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন । তারা বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করছে । নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিও তারা বেশ যন্তবান । 

No comments:

Post a Comment